নিম ও নিম তেল / Neem and Neem Oil

নিমঃ (বৈজ্ঞানিক নাম: AZADIRACHTA INDICA) একটি ঔষধি গাছ যার ডাল, পাতা, রস সবই কাজে লাগে। নিম একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ বৃক্ষ। পাতা কাস্তের মত বাকানো থাকেজ এবং পাতার কিনারায় ১০-১৭ টি করে খাঁজযুক্ত অংশ থাকে। নিম গাছে এক ধরনের ফল হয়। আঙুরের মতো দেখতে এই ফলের একটিই বীজ থাকে। জুন-জুলাইতে ফল পাকে এবং ফল তেতো স্বাদের হয়। ভারত এবং বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই নিম গাছ জন্মে। নিম গাছ সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়া প্রধান অঞ্চলে ভাল জন্মে। নিমের পাতা থেকে বর্তমানে প্রসাধনীও তৈরি হচ্ছে। কৃমিনাশক হিসেবে নিমের রস খুবই কার্যকরী। নিমের কাঠ খুবই শক্ত। এই কাঠে কখনো ঘুণ ধরে না। পোকা বাসা বাঁধে না। উইপোকা খেতে পারে না। এই কারণে নিম কাঠের আসবাবপত্রও বর্তমানে তৈরি করা হচ্ছে।

এছাড়া প্রাচীনকাল থেকেই বাদ্যযন্ত্র বানানোর জন্য কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর উৎপাদন ও প্রসারকে উৎসাহ এবং অন্যায়ভাবে নিম গাছ ধ্বংস করাকে নিরুৎসাহিত করছে। নিমের এই গুনাগুনের কথা বিবেচনা করেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‌একে ‘একুশ শতকের বৃক্ষ’ বলে ঘোষনা করেছেন।

 

ব্যবহার্য অংশঃ পাতা, ফল, ছাল বা বাকল, নিমের তেল, বীজ। অর্থাৎ, এক কথায় নিমের সমস্ত অংশ ব্যবহার করা যায়।

ঔষধি গুণাগনঃ

বিশ্বব্যাপী নিম গাছ, গাছের পাতা, শিকড়, নিম ফল ও বাকল ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে পরিচিত। বর্তমান বিশ্বে নিমের কদর তা কিন্তু এর অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহারের জন্য। নিম ছত্রাকনাশক হিসেবে, ব্যাকটেরিয়া রোধক হিসেবে, ভাইরাসরোধক হিসেবে, কীট-পতঙ্গ বিনাশে, ম্যালেরিয়া নিরাময়ে, দন্ত চিকিৎসায় ব্যথামুক্তি ও জ্বর কমাতে, জন্ম নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়।

ব্যবহারঃ

  • কফজনিত বুকের ব্যথা: অনেক সময় বুকে কফ জমে বুক ব্যথা করে। এ জন্য ৩০ ফোটা নিম পাতার রস সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে ৩/৪ বার খেলে বুকের ব্যথা কমবে। গর্ভবতী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এই ঔষধটি নিষেধ।
  • কৃমি: পেটে কৃমি হলে শিশুরা রোগা হয়ে যায়। পেট বড় হয়। চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। এই জন্য ৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ নিম গাছের মূলের ছালের গুঁড়ো দিনে ৩ বার সামান্য গরম পানিসহ খেতে হবে।
  • উকুন নাশক: নিমের পাতা বেটে হালকা করে মাথায় লাগিয়ে ঘন্টা খানেক পরে মাথা ধুয়ে ফেললে ২/৩ দিনের মধ্যে উকুন মরে যায়।
  • অজীর্ণ: অনেকদিন ধরে পেটের অসুখ, পাতলা পায়খানা হলে ৩০ ফোঁটা নিম পাতার রস অর্ধেক কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে সকাল-বিকাল খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়।
  • খোস পাচড়া: নিম পাতা পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে খোসপাচড়া চলে যায়। পাতা বা ফুল বেটে গায়ে কয়েকদিন লাগালে চুলকানি ভালো হয়।
  • পোকা-মাকড়ের কামড়: পোকা মাকড় কামড়ালে বা হুল ফোটালে নিমের মূলের ছাল বা পাতা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে ব্যথা উপশম হয়।
  • দাঁতের রোগ: নিমের পাতা ও ছালের গুড়ো কিংবা নিমের ছাল দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে দাঁত হবে মজবুত।
  • জন্ম নিয়ন্ত্রণে নিম: নিম তেল একটি শক্তিশালী শুক্রাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, নিম তেল মহিলাদের জন্য নতুন ধরনের কার্যকরী গর্ভনিরোধক হতে পারে। এটি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই শুক্রানু মেরে ফেলতে সক্ষম।
  • ব্লাড সুগারের ডোজ: সকালে খালি পেটে ১৫ থেকে ২০ টি নিম পাতা চিবিয়ে খেলে উপকার হয়। চিবিয়ে খেতে অসুবিধা হলে একই নিয়মে ৫ থেকে ৬ চামচ নিমপাতার রস খেলে একই উপকার হয়।

 

 

চুলের যত্নে নিম তেলের উপকারিতাঃ

১। মাথার ত্বকের যে কোনো ক্ষতি পূরণ করতে নিম তেল সাহায্য করে। অর্থাৎ, মাথার ত্বকের যদি কোনো ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে নিমতেল ব্যবহার করুন।

২। নিম তেলে নিরাময়কারী উপাদান মাথার ত্বকের শুষ্কতা ও চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে।এছাড়াও এই তেল মাথার ত্বকের যে কোনো ‘মাইক্রোবায়াল’ সংক্রমণ দূর করতে সহায়তা করে ।

৩। চুলে ও মাথার ত্বকে নিয়মিত তেল ব্যবহারের মাধ্যমে খুশকি থেকে দূরে থাকা সম্ভব ।

আপনার ব্যবহার করা শ্যাম্পুতে কয়েক ফোঁটা নিমের তেল মেশান। এবার চুলে শ্যাম্পু মেখে ২-৩ মিনিট অপেক্ষা করুন। এভাবে আপনার উসকো খুসকো ও প্রাণহীন চুল তার উজ্বলতা ফিরে পেতে পারে। নিয়মিত নিম তেল ব্যবহারে উকুন তাড়ানো সম্ভব। চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। চুল ভাঙ্গা রোধ করে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এটি খুশকি দূর করার সাথে সাথে চুলের গোড়া মজবুত করে।

ত্বকের যত্নে নিম তেলের উপকারিতাঃ

১. ত্বক ফর্সা হয়ে ওঠে: অল্প সময়ে ফর্সা ত্বকের অধিকারী হয়ে উঠতে চান নাকি? তাহলে ত্বকের পরিচর্যায় নিম তেলকে কাজে লাগাতে ভুলবেন না যেন! কারণ, এমনটা করলে ত্বকের অন্দরে কোলাজেনের উৎপাদন বেড়ে যেতে শুরু করে, যার প্রভাবে স্কিন টোনের উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না।

২. ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আদ্রতা ফিরে আসে: শুষ্ক ত্বক যাদের, তারা নিয়মিত এই তেল লাগালে সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। প্রতিদিন নারকেল তেল বা অলিভ অয়েলের সঙ্গে নিম তেল মিশিয়ে ভালো করে সারা শরীরে মাসাজ করলেই দেখবেন ত্বক সুন্দর হতে শুরু করেছে।

৩. ব্রণ এর প্রকোপ কমে: নিম তেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রপাটিজ থাকায় এটি যদি মুখে লাগানো যায়, তাহলে ব্রণের সমস্যা কমতে শুরু করে। কীভাবে লাগাতে হবে? – ব্রণ কমাতে কয়েক ফোঁটা নিম তেলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডর তেল মিশিয়ে ব্রণের উপর লাগান।

প্রসঙ্গত, কখনই নিম তেল যেন সরাসরি মুখে লাগাবেন না।

৪. ত্বকের বয়স কমে: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বয়স বাড়লেও ত্বকের বয়স না বাড়ুক! এমনটা যদি চান, তাহলে নিয়মিত নিম তেল দিয়ে ত্বকের মাসাজ করতে ভুলবেন না যেন! আসলে এমনটা করলে বলিরেখা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে স্কিন টানটান হয়। ফলে ত্বকের বয়স কমতে সময় লাগে না।

৫. মশারা ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না: বাড়িতে মশার উৎপাত বাড়লেই আমরা বাজারে চলতি নানা ক্রিম লাগানো শুরু করি। কারও কি জানা আছে এই ধরনের সমস্যায় নিম তেল দারুন কাজে আসে। কীভাবে ব্যবহার করতে হবে? খুব সহজ! ১০-১৫ ফোটা নিম তেল, হাফ কাপ নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে গায়ে লাগান। তাহলেই দেখবেন মশারা আর ধারে কাছে ঘেঁষতে পারছে না।

৬. ত্বকের সংক্রমণের চিকিৎসায় কাজে আসে: এই ধরনের সংক্রমণ সাধারণত নোংড়া থাকলে হয়। আর এই রোগ হলে পায়ে যন্ত্রণা হওয়ার মতো লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। অ্যাথলিট ফুট নামে পরিচিত এই ত্বকের সমস্যার প্রকোপ কমাতে নিম তেলের সঙ্গে নারকেল তেল মিলিয়ে যে জায়গায় সংক্রমণ হয়েছে সেখানে লাগান। এমনটা রোজ করলে, অল্প দিনেই দেখবেন রোগ কমতে শুরু করেছে।

৭. একজিমার মতো রোগের প্রকোপ কমায়: ত্বকের একধরনের প্রদাহজনিত রোগ হল একজিমা। নানা কারণে বহু মানুষ এই ধরনের ত্বকের সমস্যায় ভুগে থাকেন। একজিমার প্রকোপ কমাতেও নিম তেল দারুন কাজে দেয়। শরীরের যে যে জায়গায় একজিমা হয়েছে, সেখানে সেখানে নিম তেল লাগালে যন্ত্রণা কমে। তবে ভুলেও যেন সরাসরি ত্বকের উপর নিম তেল ব্যবহার করবেন না। পরিবর্তে সামান্য গরম জলে কয়েক ড্রপ নিম তেল মিশিয়ে তা দিয়ে স্নান করুন। এমনটা প্রতিদিন করলে দেখবেন রোগ কমতে শুরু করেছে।

৮. হাইপারপিগমেন্টটেশনের মতো সমস্যা দূর হয়: ত্বকে মেলানিনের পরিমাণ বাড়লেই আশঙ্কা বাড়ে হাইপারপিগমেন্টটেশনের সমস্যা হওয়ার। নিয়মিত যদি সারা শরীরে নারকেল তেলের সঙ্গে নিম তেল মিশিয়ে লাগানো যায় তাহলে মেলানিনের মাত্রা কমে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই কমতে শুরু করে হাইপারপিগমেন্টটেশনও।

৯. স্কিনের যত্নে কাজে আসে: নিমে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ থাকার কারণে ত্বকের উন্মুক্ত ছিদ্র বন্ধ করতে এটি দারুন কাজে আসে। নারকেল তেলের সঙ্গে নিম তেল মিশিয়ে মুখে লাগান, তাহলেই দেখবেন সমস্যা কমতে শুরু করে দিয়েছে।

 

অন্যান্য: নিম তেল একটি উত্কৃষ্ট মানের অ্যান্টি-সেপটিক। ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস ও উচ্চ রক্তচাপের চিকিত্সার জন্য যেসব ঔষধ গ্রহন করা হয় সেগুলোতে নিমের তেল থাকে। বাড়িতে পিঁপড়া, তেলাপোকা এবং অন্যান্য পোকা-মাকড়ের হাত থেকে রেহাই পেতে নিম তেল ব্যবহার করা যায়। বাড়িতে মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে পানির সাথে নিমের তেল মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে।

আমাদের অনলাইন স্টোরে বিশুদ্ধ নিম তেল পাওয়া যায়। 

নিম তেল =১২০০৳ প্রতি কেজি   ORDER NOW

এখনি অর্ডার করুন আর ব্যবহার করে এর কার্যকারিতা যাচাই করুন।