আনারসের উপকার ও অপকার সম্পর্কে / About Benefits & Harms of Pineapple

আনারস রসালো ও তৃপ্তিদায়ক সুস্বাদু ফল। ফলটিতে আঁশ ও ক্যালোরি ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাশিয়াম থাকে। কোলেস্টেরল ও চর্বিমুক্ত বলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এর জুড়ি নেই। অনেকেই মনে করেন, আনারস এবং দুধ একসঙ্গে খেলে বিষক্রিয়া হয়। এটা কুসংস্কার ছাড়া কিছুই না। আনারস একটি অ্যাসিটিক এবং টকজাতীয় ফল। দুধের মধ্যে যেকোনো টকজাতীয় জিনিস দিলে দুধ ছানা হয়ে বা ফেটে যেতে পারে। এতে হতে পারে বদহজম, পেট ফাঁপা বা পেট খারাপের মতো সমস্যা। কিন্তু এতে বিষক্রিয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।

আনারস সুস্বাদু মৌসুমি ফল। অনেকের কাছে প্রিয় এটি, আবার অনেকে এটি খেতে চান না। তবে আনারসের উপকারিতা জানলে হয়তো তারা সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেন।

 

চলুন জেনে নিই আনারসের কিছু পুষ্টিগুণ সম্পর্কে-

* পুষ্টির অভাবে: পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। এসব অপরিহার্য উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

* হজমশক্তি বাড়াতে: আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করতেও আনারসের জুড়ি নেই। এতে ব্রোমেলিন নামক এনজাইম থাকে যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই, হজমজনিত যে কোনো সমস্যা দুর করতে আনারস খাওয়া যেতে পারে।

* ভাইরাসজনিত ঠাণ্ডা: আনারসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকায় তা ভাইরাসজনিত ঠাণ্ডা ও কাশি প্রতিরোধে ভুমিকা রাখে। তাছাড়া জ্বর ও জন্ডিস প্রতিরোধে আনারস বেশ উপকারী। এছাড়া নাক দিয়ে পানি পড়া, গলাব্যথা এবং ব্রংকাইটিসের বিকল্প ওষুধ হিসাবে আনারসের রস খেতে পারেন।

* শরীরের ওজন কমাতে: আনারসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে। এছাড়া এতে কোন ফ্যাট না থাকায় পরিমিত পরিমানে আনারস বা এর জুস পান করলে তা শরীরের ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে। তাই, এটি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণের ওষুধও হতে পারে। দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এই ফল। ফলে শিরা-ধমনির মধ্য দিয়ে সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে।

* দাঁত ও মাড়ি রক্ষায়: আনারসে ক্যালসিয়াম  থাকায় তা দাঁতের সুরক্ষায় কাজ করে। নিয়মিত আনারস খেলে দাঁতে জীবাণুর সংক্রমণ কম হয় এবং দাঁত ঠিক থাকে। এছাড়া মাড়ির যে কোনো সমস্যা সমাধান করতে আনারস বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

* চোখের যত্নে: চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাওয়া রোগ “ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন”রোগটি হওয়া থেকে এই ফল আমাদের রক্ষা করে। আনারসে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন। প্রতিদিন আনারস খেলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। ফলে সুস্থ্য থাকতে পারে আমাদের চোখ।

* ত্বকের যত্নে: এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, যা আমাদের শক্তির যোগান দেয়। এতে থাকা প্রোটিন ত্বকের মৃত কোষ দূর করে, ত্বককে কুঁচকে যাওয়া থেকে বাঁচায়। এছাড়া তৈলাক্ত ত্বক, ব্রণসহ সব রূপলাবণ্যে আনারসের যথেষ্ট কদর রয়েছে।

* হাড়ের সমস্যাজনিত রোগ: আনারসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড়ের গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এতে থাকা ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে করে তোলে মজবুত। তাই, খাবার তালিকায় পরিমিত পরিমাণ আনারস রাখলে হাড়ের সমস্যাজনিত যে কোনও রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

* কৃমিনাশক হিসেবে: কৃমিনাশক হিসেবেও আনারসের সুনাম আছে। নিয়মিত এই ফলের রস খেলে কয়েকদিনের মধ্যেই কৃমির উৎপাত বন্ধ হয়। কৃমি দূর করতে সকালবেলায় ঘুম থেকে জেগে খালি পেটে আনারস খাওয়া উচিত।

ক্যান্সার প্রতিরোধে: ফ্রি-রেডিকেল বা মুক্ত মুলক মানবদেহের কোষের উপর বিরূপ ক্রিয়ার সৃষ্টি করার ফলে ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মত মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে। দেশী আনারসে আছে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন-সি এবং পানিতে দ্রবনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা দেহকে ফ্রি-রেডিকেল (মুক্ত মুলক) থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। ফলে ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগ দেহে বাসা বাঁধতে বাধা পায়।

>> আনারসের কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াঃ

আনারসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা থাকলেও এটি সবার জন্য ঠিক না। অনেকেরই এর কারণে এলার্জির সমস্যা যেমন- বিভিন্ন ধরনের চুলকানি, ফুস্কুরি ইত্যাদি হতে পারে।

আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রাকৃতিক চিনি; যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। আনারসের মধ্যে অতিরিক্ত চিনি আমাদের দেহে রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই, ডায়াবেটিস রোগীরা আনারস বেশি না খেয়ে সপ্তাহে ২ দিন খেতে পারেন।

আনারস একটি এসিডিক ফল। তাই খালি পেটে ফলটি খেলে পেটে প্রচন্ড ব্যথার তৈরী হতে পারে। আনারস আর দুধ এক সাথে খাওয়া যায় না, এটি একটি কুসংষ্কার। এখন অব্দি আনারস এবং দুধের মাঝে এমন কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া খুঁজে পাওয়া যায়নি যার ফলে এদেরকে এক সাথে খেলে এতে মানুষের জীবনহানি হবে। বর্তমানে অনেক খাবারেই দুধ ও আনারস একসাথে মেশানো হয় এবং সারা বিশ্বেই তা খাওয়ানো হয়। কোনো গ্যাস্ট্রিকের রোগী যদি খালিপেটে আনারসের সাথে দুধ খায় তাহলে তাঁর পেটে প্রচন্ড ব্যথা “ফুড ট্যাবু” এর উদ্ভব হতে পারে।

রক্ত তরল করার জন্য যে ওষুধ বানানো হয় তাতে আনারস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ফল দেহে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াতে বাঁধা প্রদান করে থাকে। তাই যাদের আনারস খেলে এই সমস্যায় ভুগেন তারা অবশ্যই আনারস থেকে দূরে থাকবেন।

 

পুষ্টিসাধন সহ দেহকে সুস্থ রাখতে আনারস একটি অতুলনীয় ও কার্যকরী ফল। এর বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যে কোন একটি ফল থাকলে মন্দ হয় না। তাই, চাইলেই প্রতিদিনের খাবারে আনারস রাখা যেতেই পারে।