মাথায় খুশকি হয় মূলত শুষ্ক ত্বক, ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যার কারণে। এছাড়া শীতের মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যায় এবং মাথার ত্বক অপরিষ্কার রাখার কারনেও খুশকি হয়ে থাকে। খুশকি সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে ঘরোয়া এবং সহজলভ্য কিছু উপাদান ব্যবহার করা যেতে পারে। আসুন ঘরোয়া কিছু উপাদানের মাধ্যমে মাথার ত্বক থেকে খুশকি দূর করার কিছু উপায় যেনে নেয়া যাক।
খুশকি সমস্যায় ঘরোয়া উপাদান
বেকিং সোডা:
মাথার চুল ভিজিয়ে রেখে মাথার ত্বকে একমুঠো বেকিং সোডা লাগিয়ে নিয়ে হালকা করে মালিশ করতে হবে। এরপর অল্প শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। মাথার ত্বক পরিষ্কারের সাথে সাথে যে কোনো ধরনের ফাঙ্গাসের আক্রমণ রোধেও সহায়ক বেকিং সোডা।
অ্যাসপেরিন:
অ্যাসপেরিন ট্যাবলেটে রয়েছে সিলিসাইলিক এসিড, এটি খুশকি দুর করতে সাহায্য করে। খুশকি থেকে রক্ষা পেতে দু’টি অ্যাসপেরিন ট্যাবলেট গুঁড়া করে কিছুটা শ্যাম্পুর সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে দুই মিনিট অপেক্ষা করে, ধুয়ে সাধারণ শ্যাম্পু দিয়ে আবার চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
মাউথওয়াশ:
খুশকি দূর করতে মাউথওয়াশ বেশ কার্যকর। শ্যাম্পু করার পর মাথার ত্বক ও চুল অ্যালকোহলযুক্ত মাউথওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। মাউথওয়াশের অ্যান্টি-ফাংগাল খুশকি প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী। তবে এটি ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয়ে যেতে পারে তাই কন্ডিশনার ব্যবহার করা অপরিহার্য।
লবণ:
পর্যাপ্ত পরিমাণে লবন নিয়ে তা মাথার ত্বকে ছড়িয়ে শুকনা অবস্থায় ম্যাসাজ করতে হবে। এতে করে মাথার ত্বক পরিষ্কার হবে এবং ফাংগাসের সংক্রমণও রোধ হবে। এরপর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
রসুন:
রসুনে রয়েছে অ্যান্টি-ফাংগাল উপাদান, যা খুশকি রোধোক। শুধু রসুনের রসই খুশকি দূর করতে সহায়ক। তবে রসুনের গন্ধ দূর করতে চাইলে রসুন ছেঁচে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগাতে হবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
লেবু ও নারিকেল তেল:
২ চা-চামচ কুসুম গরম নারিকেল তেলের সঙ্গে সমপরিমাণ লেবুর রস মেশান। মিশ্রণটি মাথার তালুতে কয়েক মিনিট ঘষে ঘষে লাগান। ৩০ মিনিট রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন চুল। সপ্তাহে ৩ বার এটি ব্যবহার করলে দূর হবে খুশকি।
ডিম:
ডিমে রয়েছে বায়োটিন যা খুশকি দূর করার পাশাপাশি মাথার ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। ডিমের কুসুম ফেটিয়ে নারিকেল তেল মেশান। মিশ্রণটি মাথার তালুতে লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ পরে নিন। এক ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন চুল।
আপেল সিডার ভিনেগার:
৮ টেবিল চামচ পানি ও আপেল সিডার ভিনেগার একসঙ্গে মেশান। দ্রবণে আঙুল ডুবিয়ে মাথার তালু ম্যাসাজ করে নিন। ১৫ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন চুল।
মেথি:
মেথি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন মেথি পেস্ট করে মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
দই:
চুল ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। ১ কাপ দই মাথার তালুতে লাগিয়ে রেখে দিন ১৫ মিনিট। ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন চুল।
নিম পাতা:
নিম পাতা পেস্ট করে মাথার তালুতে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন চুল।
পেঁয়াজ:
পেঁয়াজ খুশকির সমস্যা সমাধানে অন্যতম উপাদান। নিয়মিত পেঁয়াজের রস ব্যবহারে একদিকে যেমন খুশকি দূর হবে,তেমনি চুল পড়াও রোধ হবে খুব দ্রুত। তীব্র গন্ধ এড়াতে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।
তেল:
বিভিন্ন প্রাকৃতিক তেল,যেমন:তিলের তেল,কালিজিরার তেল,নারকেল তেল চুলের যত্নে বিশেষ উপকারী। এর মাঝে ডাক্তারেরা কালিজিরার তেল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
অলিভ অয়েল:
অলিভ অয়েল খুশকি দূর করতে খুবই উপকারী। অলিভ অয়েল মাথার তালুতে খুব ভালো করে ঘষুন। তারপর তোয়ালে দিয়ে মাথা জড়িয়ে রাখুন। সকালে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করলে অলিভ অয়েল খুব ভালো কাজ করে।
খুশকিজনিত কারনে যারা প্রতিনিয়ত চুল পড়ার আতংকে ভুগে থাকেন, তারা উল্লেখ্য উপায় গুলো মেনে চললে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে পারেন। তবে অনেকের চর্ম রোগের কারনে চুলের দ্রুত অবনতি হতে পারে। তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।