এসিডিটি আর গ্যাস কিন্তু এক বিষয় না ! (যদিও আমরা অনেকেই এই জায়গাটাকে ভুল বুঝে থাকি।)
পাকস্থলিতে এসিড নিঃসরণ (HCL) যদি কোনো কারণে বেড়ে যায় তখন জ্বালাপোড়া করে তাকেই এসিডিটি বলা হয় আর পেটে গ্যাস হলো- আমাদের অন্ত্রে কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে যা আমাদের খাদ্য দ্রব্যের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, হাইড্রোজেন, মিথেন ইত্যাদি উৎপন্ন করার ফলে তখন পেটে গ্যাস সৃষ্টি হয়! সত্যি বলতে আমাদের পেটে প্রতিনিয়ত গ্যাস সৃষ্টি হচ্ছে তবে, স্বাভাবিকের চেয়ে যদি বেশি উৎপন্ন হয় তাহলে আমরা তাকে গ্যাস বলি! আর এই স্বাভাবিক মান হলো গড়ে ৪০০-৬০০ মি.লি.I পেটে গ্যাস সৃষ্টির জন্য দায়ী সাধারণত আশযুক্ত খাবার; এই যেমন- শাকসব্জি কিংবা ফলমূল ইত্যাদি! তবে, অনেকের বিশেষ কোনো খাবারের প্রতি এরকম হয়ে থাকেI এরকম বেশি আশযুক্ত খাবার খাওয়া হলে আমাদের পাকস্থলী তার সবগুলো হজম করতে পারেনা কিছু খাবার অপারিপাক অবস্থায় ক্ষুদ্রান্ত্রে চলে যায় আর তখন ব্যাকটেরিয়া সেগুলো খেয়ে এরকম গ্যাস সৃষ্টি করে! আর কোনো কারণে, সেই গ্যাস নিঃসরণ এর পরিমান বেশি হলে আমরা বলি পেটে গ্যাস হয়েছে! আর এ থেকে বাচার উপায় কি বলা হলে প্রতিকারই উত্তম! এর জন্য –
- খাবার খুব আস্তে আস্তে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে যাতে খাবার হজম ভালো হয়।
- পানি বেশি বেশি পান করুন।
- এই সময় কোনো কোল্ড ড্রিঙ্কস বা এসব খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- আর সব থেকে বড় কথা চিন্তামুক্ত থাকুন।
কিছু খাবার আছে যা সাধারনভাবে “গ্যাস উৎপাদনকারী” হিসেবে পরিচিত। এ খাবারগুলো হল- ১.শশা, ২.মূলা, ৩.শালগম, ৪.পেয়াজ, ৫.মিষ্টি আলু, ৬.বাধা কপি, ৭.ফুলকপি, ৮.ব্রোকলি, ৯.কাচা মরিচ, ১০.গাজর, ১১.সেলারি, ১২.লেটুস, ১৩.পেস্তা বাদাম, ১৪.বিভিন্ন রকমের পেস্ট্রি, ১৫.আইসক্রিম, ১৬.সালাদ ড্রেসিং, ১৭.আপেল, ১৮.কলা, ১৯.পিচ, ২০.নাসপতি, ২১.আঙ্গুর, ২২.জাম, ২৩.কিছমিছ, ২৪.পাউরুটি, ২৫.পাস্তা, ২৬.ওট/ওট মিল, ২৭.পণির, ২৮.কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করা হয় এমন খাবার।
গ্যাস হলে করনীয়:
- ঘুমাবেন না: খাবার খাওয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়বেন না। কারণ, খাবার হজম না হলে পেটে গ্যাস তৈরি করে।
- ডাল জাতীয় খাবার খাবেন না: গ্যাস হলে যেকোনো ধরণের ডাল যেমন- মসুরের ডাল, বুট, ছোলা, বীণ, সয়াবিন ইত্যাদি খাবেন না। কারণ, এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, সুগার ও ফাইবার যা সহজে হজম হতে চায় না এবং গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে।
- তেল জাতীয় খাবার: ডুবো তেলে ভাজা যেকোনো ধরণের তৈলাক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- শাক-সবজি: যে সবজিগুলো সহজে হজম হয় না যেমন- ব্রোকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাকে থাকা রাফিনোজ নামক উপাদান পেটে গ্যাস তৈরি করে।
গ্যাস নিরাময়ের উপায়:
- ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করুন: নিয়মিত ব্যায়াম কিংবা সময় নিয়ে হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করুন। এতে পেটের মধ্যে গ্যাস জমতে পারবে না।
- দই বা মাঠা: দইয়ের মধ্যে রয়েছে প্রো-বায়োটিক উপাদান যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে গ্যাসের ব্যাথা কমিয়ে আনে। এছাড়া মাঠাতে থাকা ল্যাক্টিক এসিড গ্যাসকে স্বাভাবিক করে। তাই প্রতিদিন নিয়মিত মাঠা বা দই খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
- শসা: পেট ঠাণ্ডা রাখতে শসার তুলনা হয় না। এতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাসের চাপ কমিয়ে আনে এবং বুকের জ্বালা দূর করে।
- আদা: আদা সবচাইতে কার্যকরী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানসমৃদ্ধ খাবার যা গ্যাসের সমস্যা দূর করে। আদা চুষে খেলে কিংবা চা বানিয়ে খেলে এই কষ্ট থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
- লবঙ্গ: লবঙ্গ তাৎক্ষণিক গ্যাসের ব্যথা কমিয়ে আনে। ২/৩ টি লবঙ্গ মুখে নিয়ে চুষলে কিংবা সমপরিমাণ এলাচ ও লবঙ্গ গুঁড়া খেলে অ্যাসিডিটির জ্বালা এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
সাময়িক গ্যাসের ব্যথার জন্য উল্লেখিত উপায়গুলো অবলম্বনের পরও যদি ব্যথা না কমে তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন।
very usefull content.. pleasure to you