শুরু হয়ে যাচ্ছে পবিত্র রমজান। পুরো একমাস ধার্মিক মুসলমানগণ সারাদিন যেকোন পানাহার থেকে বিরত থাকবেন। সারাবছরের এগার মাস যেহেতু একভাবে আর এই এক মাস অন্যভাবে জীবনযাপন করতে হয় তাই এ সময় অনেকের কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তবে, খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বন করলে স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলো মোকাবেলা করা যায়। আসুন জেনে নিই এই রোজায় সুস্থ থাকার ১০টি সহজ উপায়।
রোজার সময় খাবার গ্রহণসহ অন্যান্য সচেতনতা ও সতর্কতা-
১। ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করুনঃ
অনেকের ধারণা ইফতারে ভাজা পোড়া না থাকলে সেটা আবার ইফতার কিসের। কিন্তু সারাদিন না খেয়ে থাকার পর গরম, ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত খাবার খেলে পেটে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া পেট জ্বালাপোড়া করতে পারে।
তাই, এসব মুখরোচক তৈলাক্ত খাবার না খেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন- চিড়া-দই, লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, নুডুলস, নরম খিচুড়ি ইত্যাদি খেতে পারেন। এর সঙ্গে বিভন্ন প্রকার সবজি, ফল, সালাদ, মাছ বা মাংস বা ডাল বা ডিম খেতে পারেন।
২। সেহরি খাওয়া বাদ দিবেন নাঃ
দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হচ্ছে সেহেরি। কখনই সেহেরি না খেয়ে রোজা রাখার চেষ্টা করবেন না। তবে সারাদিন না খেয়ে থাকতে হবে বলে এসময় অতিরিক্ত খাবার খাবেন না। সেহেরিতে শর্করা ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, আঁশ জাতীয় সবজি, ফল ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
কারণ, এ জাতীয় খাবার ধীরে ধীরে হজম হয়, ফলে সারাদিন আপনি সতেজ থাকতে পারবেন। আর এই খাবারটি ফজরের আজানের কিছুক্ষণ আগে অর্থাৎ সেহেরির শেষ সময়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। এ সময়ে সেহরি খেলে আপনার মুল্যবান ফজরের নামাজটাও কাজা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবেনা।
৩। দিনের বেলা শীতল স্থানে অবস্থান করুনঃ
যেহেতু এবার গরমের সময় রোজা শুরু হচ্ছে তাই বাহিরে দিনের বেলায় খুব রোদ ও গরম থাকবে। এসময় বাহিরে গেলে প্রচণ্ড গরমে আপনার অতিরিক্ত পানির পিপাসা লাগতে পারে।
তাই বিশেষ করে সবচেয়ে গরম সময় অর্থাৎ দুপুরের বেলা শীতল স্থানে অর্থাৎ বাসায় বা অফিসের ভিতরে থাকার চেষ্টা করুন। আর এসময় শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রা যথাসম্ভব কমিয়ে আনুন। সম্ভব হলে নিয়মিত বিরতিতে বিশ্রাম নিন।
৪। সন্ধ্যার দিকে ক্যাফেইন বা চা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুনঃ
রোজার দিনগুলোতে সন্ধ্যার দিকে অর্থাৎ ইফতারের সময় বা পরে ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় যেমন- চা, কফি বা সোডা জাতীয় পানীয় এবং কোল্ড ড্রিংস যেমন- কোক, পেপসি ইত্যাদি পান করা থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন।
এ সময় বেশি করে পানি পান করার অভ্যাস করুন। আর ঘুমাতে যাওয়ার আগেও বেশি বেশি পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৫। ইফতারিতে বেশী বেশী টাটকা ফল বা ফলের জুস খানঃ
বিভিন্ন প্রকার ফলমূল আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন- ভিটামিন ও মিনারেলের যোগানসহ পানির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। সারাদিন না খেয়ে থাকার পর বিভিন্ন রঙ্গিন ক্ষতিকর ভাজাপোড়া খাবার না খেয়ে ইফতার শুরু করতে পারেন টাটকা ফল বা ফলের জুস দিয়ে।
রোজার মাসে প্রতিদিন ইফতারে বিভিন্ন ফলমূল ও সালাদের সমন্নয়ে পরিবেশনটি এমন হতে পারে যেমন: (১) আধা কাপ (১২৫ মিলি) ফলমূল বা সবজি কিংবা ফলের জুস, (২) এক কাপ (২৫০ মিলি) সবজি বা সালাদ, (৩) যেকোন একটি ফল।
৬। সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুনঃ
বিভিন্ন কাজ করার সময় ধুলাবালিতে থাকা রোগজীবাণু আমাদের শরীরে বিশেষ করে হাতে লেগে যায়। তাই সারা বছরের ন্যায় এসময়ও নিজে ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত হাত ধোঁয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। সর্বদা নিজেকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
আশেপাশের কারো সর্দি-কাশি বা হাঁচি হলে তাঁর থেকে সাবধান থাকুন। কারণ তাঁর মাধ্যমে আপনার শরীরে ভাইরাস জ্বর বা এ জাতীয় কোনো রোগের জীবাণু সংক্রমণ ঘটাতে পারে। আর যদি আপনার ধূমপানের অভ্যাস থাকে তাহলে অবিলম্বে তা ত্যাগ করুন। আর এই বদ অভ্যাস থেকে মুক্ত হওয়ার একটি সহজ সময় হচ্ছে এই রমজান।
৭। রোজার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানঃ
রোজার সময় পর্যাপ্ত ঘুমের দিকেও বিশেষ লক্ষ্য রাখা গুরুত্বপুর্ণ। এ সময় ৭-৮ ঘণ্টার কম ঘুম আপনার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেবে। তাই, এ সময় যেন পর্যাপ্ত ঘুম হয় সেদিকে খুবই খেয়াল করুন। প্রয়োজনে দিনের বেলায় কিছুটা সময় পেলে ঘুমিয়ে নিতে পারেন।
৮। ইফতার ও সেহেরিতে পর্যাপ্ত পানি পান করুনঃ
প্রত্যেকের সারাদিনে অন্তত ৮-১২ গ্লাস পানি পান করা দরকার। যেহেতু রোজার সময় দিনের বেলা পানি সহ যেকোনো পানাহার নিষিদ্ধ তাই, ইফতারের সময় থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাদ্য গ্রহণ করুন। তবে এ সময় যথাসম্ভব চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করাই ভালো।
৯। ইফতারে ধীরে ধীরে খাবার খানঃ
রোজার সময় সারাদিন খাবার না খাওয়ায় ইফতারের সময় মনে হয় সবকিছু একসাথে খেয়ে ফেলি। সারাদিন না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে পানির চাহিদা বেড়ে যায় এছাড়া এসময় শরীরের পুষ্টির চাহিদাও থাকে আলাদা। তাই ইফতারে একসঙ্গে অনেক কিছু খাবার খাওয়া উচিত নয়।
এজন্য প্রথমে কিছু খেজুর এবং পানি দিয়ে ইফতার শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে অন্য খাবারগুলো খান। এজন্য কিছু খাবার মাগরিব নামাজের পরে খাওয়ার জন্য রেখে দিতে পারেন। অর্থাৎ ইফতারে ধীরে ধীরে খাওয়ার অভ্যাস করুন, একেবারে খাবারে হুমড়ি খেয়ে পরবেন না।
তবে যদি নিয়ম মেনে না চলে ইচ্ছামাফিক জীবন যাপন করেন তাহলে ভালোর চাইতে খারাপই হতে পারে বেশী। তাই এই রমজান মাসে ভালো থাকার জন্য উপরোক্ত স্বাস্থ্য পরামর্শ তথা খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন জীবনযাপন প্রণালীতে ধারাবাহিক নিয়ম কানুন মেনে স্রষ্টার সন্তুষ্টির পাশাপাশি সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপন করুন।
আত্মশুদ্ধির মাস মাহে রমজান। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে চলে এ আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া। হঠাৎ করেই বছরের চিরাচরিত অভ্যাসগুলো পাল্টে যায় এ মাসে।
পুরো রমজান মাস জুড়ে স্বাস্থ্য পরামর্শ পেতে আমাদের পেইজ এবং ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন!