চা তো আমরা সবাই খাই। কেউ রঙ চা তো কেউ দুধ চা! কিন্তু কখনও হলুদ দিয়ে বানানো চায়ের স্বাদ পরখ করে দেখেছেন কি? যদি করতেন, তাহলে হয়তো ওষুধের ওপর এতটা ভরসা হতো না।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ে অল্প হলুদ মেশালে অথবা গরম পানিতে হলুদ গুঁড়ো দিয়ে খেলে শরীরের ভেতরে এমন পরিবর্তন হতে শুরু করে যে কোনও রোগই আক্রমণ করতে পারেনা।
আসুন জেনে নেই, নিয়মিত হলুদ মেশানো চা খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকেঃ
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত হলুদ গুঁড়া দিয়ে বানানো চা পান করা শুরু করলে শরীরে কার্কিউমিন নামক উপাদানের প্রবেশ ঘটে, যা শরীর থেকে টক্সিক উপাদান বের করে দেওয়ার পাশাপাশি হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর মাধ্যমে দেহে জমে থাকা মেদকে ঝরিয়ে ফেলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। তাই অল্প সময়ে যদি মেদ ঝরাতে চান, তাহলে রোজ ডায়েটে হলুদকে জায়গা করে দিতে ভুলবেন না যেন!
দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটেঃ
চোখের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাস্তবিকই টার্মারিক টি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে হলুদের ভিতরে উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি উপাদান, শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে রেটিনার ক্ষমতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি চোখে প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে যাতে অন্ধত্বের মতো ভয়ঙ্কর কিছু না ঘটে, সে দিকেও খেয়াল রাখে। তাই যারা দিনের মধ্যে ৮-৯ ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেন, তাদের নিয়ম করে হলুদ গুঁড়া দিয়ে বানানো চা পান করা উচিত।
রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমেঃ
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, হলুদে উপস্থিত কার্কিউমিন রক্তে জমতে থাকা এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। আসলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা যত কমতে শুরু করে, তত হার্টের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। সেই সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনাও হ্রাস পায়।
ক্যান্সারের মতো রোগ দূরে থাকেঃ
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুসারে, হলুদে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ, শরীরে যাতে ক্যান্সার সেল জন্ম নিতে না পারে সে দিকে খেয়াল করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্যানসার রোগ ধারের কাছেও ঘেঁষতে পারে না। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন হলুদ চা খাওয়া কতটা প্রয়োজন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়ঃ
নানাবিধ পুষ্টিকর উপাদানে সমৃদ্ধ হলুদ দিয়ে বানানো চা খেলে শরীরের ভিতরে বেশ কিছু পরিবর্তন হতে থাকে, যার প্রভাবে ধীরে ধীরে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে রোগমুক্ত জীবন পাওয়ার স্বপ্ন একেবারে হাতের মুঠোয় চলে আসে।
স্কিন টোনের উন্নতি ঘটেঃ
নিয়মিত হলুদ মেশানো চা খাওয়া শুরু করলে দেহের ভিতরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বাড়তে থাকে, যার প্রভাবে ত্বকের স্বাস্থ্যের এত মাত্রায় উন্নতি ঘটে যে ছোট-বড় সব ধরনের স্কিন ডিজিজের প্রকোপই কমতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, সোরিয়াসিস এবং একজিমার মতো মারাত্মক ত্বকের রোগের চিকিৎসাতেও এই বিশেষ পানীয়টি নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।
হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটেঃ
হলুদে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান পাকস্থলিতে উপস্থিত উপকারি ব্যাকটেরিয়ার শক্তি বাড়িয়ে দেয়। ফলে হজম ক্ষমতা এতটা বেড়ে যায় যে বদ-হজম দূরে পালায়।
স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটেঃ
হলুদে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদানকে শরীরে থেকে বের করে দেয়। ফলে ব্রেন সেল ড্যামেজের আশঙ্কা কমে। অন্যদিকে কার্কিউমিন মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু অংশের ক্ষমতা এতটা বাড়িয়ে দেয় যে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে বুদ্ধির জোরও বাড়তে থাকে।
হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়ঃ
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত হলুদ দিয়ে বানানো চা খেলে হার্টে রক্ত সরবরাহকারি আর্টারিদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার বা হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। শুধু তাই নয়, স্ট্রোকের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমাতেও হলুদ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই হার্টকে যদি দীর্ঘদিন চাঙ্গা রাখতে চান, তাহলে হলুদ দিয়ে বানানো চা খাওয়া জরুরী!
অ্যালজাইমার্সের মতো রোগকে দূরে রাখেঃ
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, হলুদে উপস্থিত কার্কিউমিন নামক উপাদান ব্রেন সেলের যাতে কোনওভাবে ক্ষতি না হয়, সে দিকে নজর রাখে। তাই নিয়মিত হলুদ দিয়ে বানানো চা খাওয়া শুরু করলে ব্রেন পাওয়ার এতটা বৃদ্ধি পায় যে মস্তিষ্ক সম্পর্কিত কোনও রোগই ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। তাই যাদের পরিবারে এই ভয়ঙ্কর রোগের ইতিহাস রয়েছে, তাদের নিয়মিত হলুদ চা খাওয়া শুরু করা উচিত। এবার নিশ্চয় বুঝে গেছেন, সাধারণ চায়ের পরিবর্তে হলুদ চা খাওয়ার প্রয়োজন কতটা ..!
কিভাবে বানাতে হবে হলুদ চা?
> ৩-৪ কাপ পানি ফুটিয়ে নিন প্রথমে।
> পানি ফুটতে শুরু করলে তাতে ২ চামচ হলুদ গুঁড়ো মেশান।
> হলুদ মেশানোর পর কম করে ৫-১০ মিনিট পানি নারাতে থাকুন।
> সময় হয়ে গেলে পানি ছেঁকে নিন।
> এবার অল্প করে মধু, লেবুর রস এবং দুধ মিশিয়ে নিন।
> আপনার হলুদ চা তৈরি। এবার গরম গরম পান করুন।
সকল ধরণের স্বাস্থ্য পরামর্শ ও টিপস পেতে পাশে থাকুন।
কমেন্ট করে মন্তব্য জানাতে ভুলবেন না এবং শেয়ার করুণ
ধন্যবাদ!