পাথরকুচি পাতা – এক উপকারি ঔষধি গাছ, কিডনি পাথর থেকে ত্বকের যত্নে বহুমুখী ব্যবহার

পাথরকুচি বীরুৎজাতীয় একটি ঔষধি উদ্ভিদ।

🔹 বৈজ্ঞানিক নাম (Botanical name):
Kalanchoe pinnata (Lamk.) Pers.
ফ্যামিলি: Crassulaceae

আরেক ধরনের পাথরকুচির বৈজ্ঞানিক নাম Berginia ligulata Wall, যার ফ্যামিলি Saxifragaceae। ইউনানি মতে এটিই আসল পাথরকুচি, তবে কবিরাজরা Kalanchoe pinnata কেই আসল মনে করেন।

🌿 পাথরকুচি পাতার উপকারিতা (১৫টি প্রধান ব্যবহার):

এটি দেড় থেকে দুই ফুট উঁচু হয়। পাতা মাংসল ও মসৃণ, আকৃতি অনেকটা ডিমের মতো। পাথরকুচি পাতা মাটিতে ফেলে রাখলেই অনায়াসে চারা পাওয়া যায়।

১. কিডনির পাথর অপসারণ:
পাথরকুচি পাতা কিডনি এবং গলগণ্ডের পাথর অপসারণ করতে সাহায্য করে। দিনে দুবার ২ থেকে ৩টি পাতা চিবিয়ে অথবা রস করে খান।

২. পেট ফাঁপা ও গ্যাস:
অনেক সময় দেখা যায় পেট ফুলে গেছে, প্রসাব আটকে আছে, আধোবায়ু, সরছে না, সেই ক্ষেত্রে একটু চিনির সাথে এক বা দুই চা-চামচ পাথর কুচির পাতার রস গরম করে সিকি কাপ পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়ালে পেট ফাঁপা কমে যাবে।

৩. মেহ রোগ:
সর্দিজনিত কারণে শরীরের নানান স্থানে ফোঁড়া দেখা দেয়। যাকে মেহ বলা হয়। এ ক্ষেত্রে পাথরকুচির পাতার রস এক চামুচ করে সকাল-বিকাল একসপ্তাহ খেলে উপকার পাওয়া যায়।

৪. রক্তপিত্ত:
পিত্তজনিত ব্যথায় রক্তক্ষরণ হলে দু’বেলা এক চা-চামচ পাথর কুচির পাতার রস দুদিন খাওয়ালে সেরে যাবে।

৫. মৃগী:
মৃগী রোগাক্রান্ত সময়ে পাথর কুচির পাতার রস ২-১০ ফোঁটা করে মুখে দিতে হবে। একটু পেটে গেলেই রোগের উপশম হবে।

৬. পুরনো সর্দি ও কাশি:
সর্দি পুরান হয়ে গেছে, সেই ক্ষেত্রে এটি বিশেষ উপকারী। পাথরকুচি পাতা রস করে সেটাকে একটু গরম করতে হবে এবং গরম অবস্থায় তার সাথে একটু সোহাগার খৈ মেশাতে হবে। তিন চা-চামচের সাথে ২৫০ মিলিগ্রাম যেন হয়। তা থেকে দুই চা চামচ নিয়ে সকালে ও বিকালে দুবার খেলে পুরান সর্দি সেরে যাবে এবং সর্বদা কাশি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

৭. শিশুদের পেট ব্যথা:
শিশুর পেটব্যথা হলে, ৩০-৬০ ফোঁটা পাথর কুচির পাতার রস পেটে মালিশ করলে ব্যথার উপশম হয়। তবে পেট ব্যথা নিশ্চিত হতে হবে।

৮. ত্বকের যত্ন:
পাথরকুচি পাতায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। সাথে সাথেই এর মধ্যে জ্বালাপোড়া কমানোর ক্ষমতা থাকে। যারা ত্বক সম্বন্ধে সচেতন, তারা পাথরকুচি পাতা বেটে ত্বকে লাগাতে পারেন। ব্রণ ও ফুস্কুড়ি জাতীয় সমস্যাও দূর হয়ে যাবে।

৯. কাটাছেঁড়া বা থেঁতলে গেলে:
টাটকা পাতা পরিমাণ মত হালকা তাপে গরম করে কাটা বা থেতলে যাওয়া স্থানে সেক দিলে আরাম পাওয়া যায়।

১০. পাইলস বা অর্শ:
পাথরকুচি পাতার রসের সাথে গোল মরিচ মিশিয়ে পান করলে পাইলস্ ও অর্শ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

১১. জন্ডিস ও লিভারের সমস্যা:
লিভারের যেকোনো সমস্যা থেকে রক্ষা করতে তাজা পাথরকুচি পাতা ও এর জুস অনেক উপকারী।

১২. কলেরা, ডায়রিয়া, রক্ত আমাশয়:
তিন মিলিলিটার পাথরকুচি পাতার জুসের সাথে ৩ গ্রাম জিরা এবং ৬ গ্রাম ঘি মিশিয়ে কয়েক দিন খেলে এসব রোগ থেকে উপকার পাওয়া যায়।

১৩. শরীর জ্বালাপোড়া:
দু-চামচ পাথর কুচি পাতার রস, আধা কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে দুবেলা খেলে উপশম হয়।

১৪. বিষাক্ত পোকা কামড়:
বিষাক্ত পোকায় কামড়ালে এই পাতার রস আগুনে সেঁকে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

১৫. উচ্চ রক্তচাপ ও মূত্র সমস্যা:
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং মুত্রথলির সমস্যা থেকে পাথরকুচি পাতা মুক্তি দেয়।