জিরা / Cumin

 

 

বাংলা নামঃ জিরা। ইংরেজী নামঃ Cumin. বৈজ্ঞানিক নামঃ Cuminum Cyminum. পরিবারঃ Apiaceae

জিরা একটা অত্যন্ত জনপ্রিয় মসলা এবং রান্না করা খাবার সুস্বাদু করতে জিরার জুড়ি নেই।

জিরার উপকারিতাসমূহ>

*) হজমে সহায়ক: হজম ক্ষমতার উন্নতিতে জিরা বেশ কার্য্করী । আসলে এতে উপস্থিত থাইমল এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। থাইমল খাবার সহজেই হজম করে ফেলে।

তাই তো যারা হজম জনীত সমস্যায় ভুগছেন, তারা দিনে ৩ বেলা জিরা দিয়ে বানানো চা বা পানি পান করুন। কয়েকদিন জিরা পানি বা জিরার চা পান করলে দেখবেন উপকার মিলতে শুরু করবে।

  • কীভাবে বানাতে হবে জিরা চা? খুব সহজ।

প্রথমে ১ কাপ পানি, ১ চামচ জিরা মিশিয়ে পানি ফুটিয়ে নিন। যখন পানি ফুটে গেছে তখন আঁচটা বন্ধ করে পানি ছেঁকে নিয়ে পান করুন।

এক গ্লাস পানিতে, এক চা চামচ জিরা জ্বাল দিতে হবে। তারপর এর রং বাদামী হয়ে আসলে নামিয়ে ফেলতে হবে। ঠান্ডা হয়ে এলে এটি পান করতে হবে। এটি দিনে ৩-৪ বার পান করতে হবে। এ মিশ্রণটি পেট ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি করবে।

নিয়মিত জিরা পানি পান করলে অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও গর্ভকালীন হজম এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে জুরি নেই জিরা পানির।

*) শরীরকে হাইড্রেট করে: জিরার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতার মাঝে একটি হচ্ছে গরম কালে এটি দেহকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। এটিতে স্বাস্থ্যসম্মত মশলা জিরা থাকার কারনে এটি প্রাকৃতিক ভাবে দেহের তাপমাত্রা কমায়। আমাদের প্রতিদিনকার কর্মব্যস্ততার মাঝে আমরা অনেক সময়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি খেতে ভুলে যাই এবং তৃষ্ণা পেলে পানি খাই। পানি কম খাবার ফলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। সকাল বেলা এক-গ্লাস জিরা পানি পান করলে সেটি শরীরের পানির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনবার পাশাপাশি শরীরকে রিহাইড্রেট করে।

*) অনিদ্রা দূর করতে: আপনার কি অনিদ্রা সমস্যা রয়েছে? তবে জিরা হতে পারে এর একটি সুন্দর সমাধান। জিরা গুঁড়ো এবং একটি কলা মিশিয়ে নিন। এটি নিয়মিত রাতে খান। এটি ভাল ঘুমাতে সাহায্য করবে।

যাদের রাতের বেলা ভাল করে ঘুম আসে না, তারা প্রতিদিন ঘুমনোর আগে ১ চামচ চটকানো কলার সঙ্গে হাফ চামচ জিরা পাউডার মিশিয়ে খেতে পারেন। এই ঘরোয়া ওষুধটি খেলে ঘুমের আর তেমন কোনও সমস্যা হবে না । কারণ, জিরা এবং কলা এক সাথে খেলে মস্তিষ্কে মেলাটোনিন নামে এক ধরনের রাসায়নিকের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই কেমিক্যালটি ঘুম আসার ক্ষেত্রে দারুনভাবে সাহায্য করে।

*) ঠান্ডা-জ্বরের প্রকোপ কমিয়ে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: জিরাতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্য়াকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি- ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ যা ঠান্ডা লাগা এবং জ্বরের প্রকোপ কমাতে বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে বলে জানা যায় । এই প্রকৃতিক উপাদানটি শরীরের প্রবেশ করা মাত্র দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় ।

আয়রন এবং ডায়েটারি ফাইবারের উৎস জিরা। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত জিরা পানি পান করলে অনেক অসুখ থেকেই দূরে থাকা সম্ভব। এর ফলে ভাইরাল ফিবার এবং ওই সংক্রান্ত নানাবিধ কষ্ট কমে যায়। জ্বরের প্রকোপ কমাতে ১ চামচ জিরা এবং অল্প পরিমাণ আদা, ১ গ্লাস পানিতে মিশিয়ে নিন তারপর পানি ফুটিয়ে নিয়ে ছেঁকে নিন। এই ছেঁকে নেওয়া পানি দিনে ২-৩বার পান করুন। তাহলেই দেখবেন জ্বর বা ঠান্ডা জণিত কষ্ট কমে যাবে।

*) বদহজম রোধে জিরা: দিনের শুরুতে এক-গ্লাস জিরা জল পানি খেয়ে নিলে সেটি পরিপাকতন্ত্রের জন্য ভালো। কারণ এটা ডায়রিয়া, সকালবেলার শরীর খারাপ, গা গোলানো এবং ডিসপেপসিয়ার মতন বিভিন্ন সমস্যার প্রতিকার করে। এ পানি এনজাইমের সংশ্লেষণে সাহায্য করে। কারণ, এই এনজাইম ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট ও গ্লুকোজকে ভাঙে।

*) রক্তে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ায়: জিরাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন। আয়রন শক্তির মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে, শরীরে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি মাধ্যমে সেলুলার স্তরে অক্সিজেনের পরিমান বৃদ্ধি করে।

*) কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে: আপনি কি কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে আজ থেকেই জিরার সাথে বন্ধুত্ব করে ফেলুন, দেখবেন আরাম পাবেন। কারণ, এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, যা বেশ কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বাড়িয়ে দিয়ে কোষ্টকাঠিন্যের মতো রোগ সারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, পাইলসের কষ্ট কমাতেও জিরা দারুনভাবে সাহায্য করে।

যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তারা দিনে ২বার এই জিরা পানি পান করতে পারেন। অথবা ১ চামচ জিরা ভেজে নিয়ে গুঁড়ো করে নিন। তারপর সেই পাউডার ১ গ্লাস পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেন। এক্ষেত্রে, জিরা পাউডার এবং জলের সঙ্গে অল্প করে মধু মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে । এমনটা করলে বেশি উপকার পাবেন বলে আশা করা যায়।

*) শরীর থেকে টক্সিক উপাদান দূর করতে: শরীরের থেকে টক্সিক উপাদান পরিষ্কার করতে এই জিরা পানির জুড়ি মেলা ভার। সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন জিরা। সকালে খালি পেটে খান। এতে সারা দিন শরীর ঝরঝরে থাকে।

*) রক্তস্বল্পতা দূরীকরণ: জিরাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। শরীরের জন্য জরুরী অন্যতম মিনারেল আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে যা অক্সিজেন পরিবহন করতে সহায়তা করে। নিয়মিত জিরা পানি পান, রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।

*) লিভার ভাল রাখে: জিরা পানি শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করতে সহায়তা করে। তাই, লিভার ভাল রাখতে এবং ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় জিরা পানি খুবই উপকারী।

*) ডায়াবেটিস বা রক্তে শর্করা রোধে: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের বেশি করে জিরা খাওয়া দরকার। মসলাটি শুধু তাদের ডায়েটকে নিয়ন্ত্রণে রাখে না; একইসাথে রক্তে চিনির পরিমাণও কমিয়ে দেয়। জিরা পানির মধ্যে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করবার গুণ আছে। জিরা পানি শরীরে রক্তের উপাদানের পরিমাণ বজায় রাখার পাশাপাশি রক্তের মধ্যে শর্করারা মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

*) গর্ভবতী মেয়েদের শরীর সুরক্ষায়: গর্ভবতী মহিলাদের শরীর ঠিক রাখতে জিরার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এই সময় সন্তান সম্ভাব্য মায়েদের কনস্টিপেশন এবং হজমের সমস্যা হয়ে থাকে। আর যেমনটা আগেও বলা হয়েছে যে, জিরা এই দু’ধরনের সমস্যা কমাতে দারুন উপকারে লাগে। সেই সঙ্গে মাথা ঘোরা এবং গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত আরও সব লক্ষণ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।

জিরাতে থাকা আয়রন গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী মায়েদের জন্য খুবই ভালো। এটা গর্ভস্থ ভ্রুণের, বাচ্চার এবং মায়ের আয়রনের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। এসব কারণেই ভাবি মায়েদের প্রতিদিন ১ গ্রাস গরম দুধে হাফ চামচ জিরা এবং ১ চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

*) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে জিরা: জিরা পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং অতিরিক্ত লবণের ক্ষতিকর প্রভাব কাটাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম প্রয়োজন। তাই নিয়মিত জিরা পানি খাওয়ার অভ্যাস করলে জিরা পানিতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।