শতমূলী / Asparagus

 

 

বাংলা নাম: শতমূলী, ইংরেজ নাম: Asparagas, বৈজ্ঞানিক নাম: Asparagas racemosus, পরিবার: Liliaceae (Lily family)

 

 

   উপকারিতা:

শতমূলী পুষ্টিকারক ও বলকারক এবং মাতৃদুগ্ধ পুষ্টিকারী। এর তাজা শিকড়ের রস গনোরিয়া রোগের ক্ষেত্রে উপকারী। শতমূলী যৌন শক্তিবর্ধক, বীর্য সৃষ্টিকারী ও বীর্য স্তম্ভক হিসেবে কার্যকর। ভেষজ বিজ্ঞানে প্রাচীনকাল থেকেই এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে এ উপাদানটি যৌবন সুরক্ষায় কার্যকর। এর নেই কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

   ফর্মুলা:

শতমূলী, আরবি গাম, খোরমা, শুকনো পানিফল, ফুন্দকের শাস, পেস্তা বাদাম, মনজে পুন্বাদানা, করণফুল, যৌজবুওয়া, বিসবাসাসহ অন্যান্য উপাদানের সমন্বয়ে ওষুধ তৈরি করে নিতে হয়।

 

 

   বিবরণ:-

সবজি হিসাবে ব্যবহৃত একবীজপত্রী উদ্ভিদ। পুঁথির মালার মত গাঁটযুক্ত সঞ্চয়ী গুচ্ছমূলবিশিষ্ট -তাই নাম শতমূলী। শতমূলী লতাজাতীয় উদ্ভিদ। সাধারণত অন্য গাছ বা খুঁটিতে ভর করে আঁকাবাঁকা হয়ে বেড়ে উঠে। এর লতায় বাঁকানো কাঁটা থাকে। শরৎকালে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এর মূল হয়। মাঘ-ফাল্গুনে ফল পাকে। কাঁচা অবস্থায় ফল সবুজ হয়। পাকলে লাল দেখায়। এই উদ্ভিদের গোড়ায় একগুচ্ছ মূল হয়, এ মূলকে শতমূল বা শতমূলী বলে। অনেকে শোভা বৃদ্ধির জন্য শখ করে বাড়ির সামনে বাগানে ফুল গাছের সাথে শতমূলী গাছ লাগিয়ে থাকেন। সাধারণত উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে শতমূলী গাছ ভালো জন্মে। তবে দো-আঁশ ও বেলে মাটিতে অত্যধিক হয়ে থাকে।

 ব্যবহার্য অংশ:  কন্দমূল।

 

   পুষ্টি উপাদানঃ

শতমূলী উচ্চমানের ফলিক অ্যাসিড ও পটাশিয়ামের উৎস। এতে আরও রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-৬। ১৪০ গ্রাম শতমূলীতে রয়েছে ৬০ শতাংশ ফলিক অ্যাসিড। শতমূলী কাঁচা ও রান্না করে উভয়ভাবেই খাওয়া যায়। তবে রান্নার ক্ষেত্রে ভাপে রান্না বা কম সময় ধরে রান্না করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

 

 

   ঔষধি ব্যবহার:

১। স্নায়ুশক্তি বৃদ্ধি ও শারীরিক দুর্বলতা: শতমূলীর রস (কাঁচা) ১৫-২০ মি.লি.(৩-৪ চামচ), ১ গ্লাস পরিমাণ দুধের সাথে মিশিয়ে সকালে ও বিকেলে সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়। তবে উল্লিখিত নিয়মে ১০-১৫ দিন সেবন করে যাওয়া উচিত।

২। শুক্রমেহ ও স্বপ্নদোষ প্রশমনে: ১০ গ্রাম পরিমাণ শতমূলী চূর্ণ প্রত্যহ দুধসহ ২বার সেবন করলে ফল পাওয়া যায়। উল্লিখিত নিয়মে ১ মাস সেবন করে যাওয়া উচিত।

৩। স্তন্য দুগ্ধ বৃদ্ধিতে: ৫ গ্রাম পরিমাণ শতমূলী চূর্ণ ও ৫ গ্রাম পরিমাণ অর্শ্বগন্ধ চূর্ণ একত্রে মিশিয়ে প্রত্যহ ২বার সেবন করতে হবে। উল্লিখিত নিয়মে ৫-৭ দিন সেবন করতে হবে।

৪। মূল স্বল্পতায়: শতমূলীর রস ১৫-২০ ফোঁটা(৩-৪ চা-চামচ), ১ গ্লাস পরিমাণ ডাবের পানির সাথে মিশিয়ে প্রত্যহ ২বার সেবন করতে হবে। উল্লেখিত নিয়মে ৫-৭ দিন সেবন করতে হবে।

৫। শারীরিক, যৌন দুর্বলতা ও সাদা স্রাবে- এর মূলচুর্ণ ৩-৪ গ্রাম পরিমান ১কাপ গরম দুধের সাথে মিশিয়ে দিনে ২বার, ১মাস সেবন করতে হবে।

 

>> এছাড়াও এটি-

* উচ্চরক্তচাপ কমায়।

* এসিডিটি, দুর্বলতা, যেকোনো ধরনের ব্যথা, ডায়রিয়া, আমাশয় দূর করে।

* শরীরের নানা ধরনের প্রদাহ, পাইল্স সারিয়ে তোলে।

* চোখ ও রক্তের যেকোনো সমস্যা দূর করে।

* নার্ভের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখে।

* শতমূলীর শিকড় লিভার, কিডনি ও গনোরিয়ার জন্য উপকারী।

* যাদের বদহজমের সমস্যা রয়েছে, তারা শতমূলীর শিকড় রস করে তাতে মধু মিশিয়ে খান, উপকার পাবেন।

* ঋতুস্রাব ও জরায়ুর অসুস্থতা ছাড়াও লিউকোরিয়া রোগীদের জন্য ব্যবহার হয়।

* শতমূলীর স্বাস্থ্য গুণাগুণ অনেক। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনে। অ্যাসিডিটি, শারীরিক দুর্বলতা, ব্যথা, ডায়রিয়া, আমাশয় ও শরীরের নানা প্রকার প্রদাহ দূর করে।

 

   রোগ অনুযায়ী ব্যবহার পদ্ধতি:

* হজমশক্তি র্বৃদ্ধি ও বায়ু নিঃসরণে এর ফল প্রয়োজন মত তরকারি রান্না করে খেতে হবে।

* বাত-ব্যাথায় ও স্নায়ু দুর্বলতায়, এর ছালের রস প্রয়োজন মত রসের সাথে প্রয়োজন মত রসুন পিষে প্রলেপ দিতে হবে।