লেবুর গুনাগুণ/ The Virtues of Lemons

 

 

লেবু হল সাইট্রাস লিমন (Citrus limon)-এর সাধারণ নাম। বংশবৃদ্ধিকারী টিস্যু আবৃতবীজী লেবুর বীজকে ঘিরে রাখে। লেবু রান্না করে বা রান্না না করে – উভয়ভাবেই খাওয়া হয়। ফল এর কদর মূলত রসের জন্যেই, যদিও এর শাঁস ও খোসাও ব্যবহৃত হয়, প্রধানত রান্না ও বেকারির কাজে। লেবুর রসে প্রায় ৫ শতাংশ (প্রতি লিটারে ০.৩ মোলের কাছাকাছি) সাইট্রিক এসিড থাকে যার কারণে এর স্বাদ টক হয় এবং pH ২-৩ হয়।

 

 

চলুন জেনে নিই লেবুর বিভিন্ন উপকারিতা গুলোঃ

১. লেবুপানি দেহের ত্বকের জন্য খুবই ভাল। লেবুর ভিটামিন-সি উপাদান দেহের ত্বক ও টিস্যুর জন্য খুব জরুরি। তাই, ত্বকের যে কোন সমস্যা রোধ করতে প্রতিদিন লেবুপানি পান করুন। আপনার ত্বককে করে তোলে সুন্দর ও পরিষ্কার।

২. ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে একটি বা দুটি লেবুর খোসা রেখে দিলে দেখা যায়, ফ্রিজের ভেতরের দুর্গন্ধ দূর হয়ে গেছে।

৩. মাড়ীর ব্যাথা, দাঁতের সমস্যাসহ মুখের দুর্গন্ধ দুর করে, লেবুর পানি খাবার পর দাত ব্রাশ করার প্রয়োজন নেই।

৪. চুলে তেল দিতে হয়। কিন্তু শ্যাম্পু করার পরও তাতে তেল চিটচিটে ভাব থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে লেবুর রস বিস্ময়করভাবে কাজে দেয়। লেবুর রসে অ্যাসট্রিনজেন্ট রয়েছে যা তেলতেলে অংশ শুষে নেয়। চুল হয় ঝরঝরে।

৫. লেবুর রস, ৩/৪ কাপ অলিভ অয়েল, ১/২ কাপ মধু, দিয়ে একটি প্যাক তৈরী করে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পরে শ্যাম্পু করুন। এটি চুলকে ড্যামেজ ফ্রি করবে।

৬. লেবু পানি শরীরের রক্তবাহী ধমনী ও শিরাগুলোকে পরিষ্কার রাখে।

৭. লেবুর উচ্চ ভিটামিন যা শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যে কোন ভাইরাস জনিত ইনফেকশন যেমন- ঠান্ডা, সর্দি, জ্বর দমনে লেবু খুব কার্যকারী, মুত্রনালীর ক্ষত সারাতেও লেবুর গুরুত্ব রয়েছে।

৮. প্রাকৃতিক পরিস্কারক হিসাবে লেবুর জুড়ী নেই, এটি ত্বকের লাবন্য ধরে রাখতে সাহায্য করে, মধুর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পায়। এটি ত্বকের সংকোচন সৃষ্টিকারী পদার্থকে নিয়ন্ত্রন রাখে। চামড়ার অতিরিক্ত তেল অপসারণ করে। লেবুর রস প্রাকৃতিক অ্যানটি সেপটিক। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমন দূর করে। ব্রণ সারিয়ে তোলে, ত্বকের রং উজ্জল করে। বয়সের বলিরেখা দূর করে।

৯. নাকের ওপর বা ত্বকে ব্ল্যাক হেড সৌন্দর্যহানি ঘটায়। লেবুর রস এসব ব্ল্যাক হেডের গোড়া নরম করে তাদের তুলে আনে। লেবুর রসের সঙ্গে আর কিছু মেশানোর প্রয়োজন নেই। বেশ ভালো করে ত্বকে রস দিয়ে ঘষুন।

১০. নিয়মিত লেবুর খোসা খেলে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা কমে। এছাড়াও লেবুতে আছে ক্যান্সার বিরোধী ২২ প্রকার যৌগ। যা ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

১১. লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি। আর ভিটামিন-সি ঠাণ্ডা কাশি প্রতিরোধে খুবই উপকারী।

১২. লেবুর রস ও গরম পানি একসাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করলে অন্ত্রের কার্যক্রম ঠিক রাখে এবং শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ফেলে।

১৩. মুখের রুচি বাড়াতে লেবুর জুড়ি নেই।

১৪. ওজন দ্রুত কমাতে সহায়তা করে। লেবুতে থাকে পেকটিন-ফাইবার যা খিদে নিয়ন্ত্রণ করে।

১৫. গর্ভবতী নারীদের জন্য খুবই ভালো লেবু-জল। এটা শুধু গর্ভবতীর শরীরই ভালো রাখে না, বরং গর্ভের শিশুর অনেক বেশী উপকার করে। লেবুর ভিটামিন-সি ও পটাশিয়াম শিশুর হাড়, মস্তিষ্ক ও দেহের কোষ গঠনে সহায়তা করে।

১৬. ‌লেবুর রস চুলের দারুণ লাইটেনার হিসেবে করে। কোনো কিছু দেয়ার প্রয়োজন নেই। লেবুর রস চুলে দিয়ে নিন। এতে সূর্যের তাপ মাথাকে গরম করতে পারবে না।

১৭. খুশকির সমস্যা সমাধানে কাগুজি লেবু, মেথি বা পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে পারেন।

১৮. বয়সের ছাপ পরে বলিরেখার মাধ্যমে। তাছাড়া অনেকের এমনিতেই বলিরেখা পরতে পারে। লেবুর রস এই বলিরেখা দূর করতে দারুণ কার্যকর। রেখাগুলোতে লেবুর রস দিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন এবং ধুয়ে ফেলুন।

১৯. একটুকরা লেবু দিয়ে নখ পলিশ করলে নখ তার বিবর্নতা থেকে উজ্জল রং ফিরে পায়। লেবুর পানিতে পা, হাত, ডুবিয়ে রাখলেও একটি উপকার হয়।

সর্তকতা:

১. যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তাদের অতিরিক্ত লেবু খেলে বুক জ্বালা করে।

২. লেবুর রস বা লেবুতে কারো কারো অ্যালার্জি হয়ে থাকে, তাই আগে থেকে জেনে নিয়ে লেবু চিকিৎসা শুরু করা উচিত৷ তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে৷

৩. অতিরিক্ত লেবু সেবনে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে পেট ফাঁপাসহ নানান ধরনের সমস্যা ও অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে এবং অতিরিক্ত লেবু ও লেবুর শরবত পানের ফলে পেটে ব্যথা এবং তল পেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

৪. যে কোনো মানুষের পরিমিত লেবু খাওয়া স্বাস্থের জন্য ভালো কিন্তু অতিরিক্ত লেবু স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।