যত্রিক
আরবী নামঃ বিসবাসা, জোঝউৎলীব
বাংলা বা স্থানীয় নামঃ জৈত্রী, যত্রিক
ইউনানী নামঃ জাওয়াত্রী, বিসবাসা
আয়ুর্বেদিক বা কবিরাজী নামঃ জয়ত্রী
ফার্সী নামঃ বজবার
ইংরেজী নামঃ Mace
বৈজ্ঞানিক নামঃ Myrstca fragrans Houtt.
পরিবারঃ Myristicaceae
পরিচিতিঃ
যত্রিক বড় আকারের গাছ। সরল ভাবে বেড়ে উঠে। গাছ ১২-১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। পাতা চামড়ার ন্যায় পূরু ও শক্ত, পাতা লম্বাকৃতির হয়। পাতার উপরিভাগ গাঢ় সবুজ বর্ণের এবং নিম্নভাগ ফিকে ধূসর বর্নের হয়। পাতপ পাকলে লাল ধূসর বর্ণের দেখায়, শিরা নিচে থাকে। বর্ষার আগে ফুল এবং বর্ষার পরে ফল হয়। ফল পাকলে আপনা-আপনি ফেটে যায়, ফলের মধ্যস্থিত বীজের চারিদকে বিভিন্ন আকারে পাতলা লালচে হলুদে বহিরাবরণ থাকে, এই আবরণ দেখতে জালের মত, এটাকেই যত্রিক বলা হয়। যত্রিক শুষ্ক হলে পীতবর্ণের এবং অত্যন্ত সহজ ভাবে ভাঙ্গা যায়।
মিযাজঃ
২য় শ্রেণীর উষ্ণ ও শুষ্ক। মতান্তরে ১ম শ্রেণীর উষ্ণ ও ২য় শ্রেণীর শুষ্ক।
স্বাদঃ
যত্রিক তিতা ও তৈলাক্ত স্বাদযুক্ত।
ব্যবহারঃ
পুরা যত্রিক।
সেবন মাত্রাঃ
১-৭ গ্রাম পর্যন্ত সেবন করা যায়।
অপকারিতাঃ
মাত্রাতিরিক্ত সেবনে মাথা ব্যথা ও যকৃত প্রদাহ হতে পারে।
সংশোধনঃ
আরবি গাম ও আকর গোলাপের সংশোধক।
সাধারণ ত্রিয়াঃ
হজমকারক, মুখের দুর্গন্ধনাশক, বায়ুনিঃসারক, পাকস্থলী ও যকৃতের শক্তিবর্ধক। যৌন উদ্দীপক, স্নায়ুশক্তিবর্ধক ও সাধারণ বলকারক। দেহ-মনে প্রফুল্লতা আনে, পাকস্থলীর ব্যথা নিবারক, মুখ দিয়ে রক্ত পড়া, অন্ত্রে ক্ষত, জরায়ুর দুর্বলতা এবং মাথা ব্যথা নিরসনে সুফলদায়ক।
ব্যবহারঃ
প্রাচীনকাল হতে যত্রিক মসলা হিসেবে রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মাংসের পূর্ণাঙ্গ স্বাদ পেতে হলে যত্রিক ব্যবহার করতে হয়। ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিভিন্ন ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে যত্রিকের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। উভয় চিকিৎসা পদ্ধতিতে যত্রিক সম্বলিত অনেক ওষুধ তৈরি করা হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে -
জওয়ারিশ বিসবাসা
জওয়ারিশ জাভেদ
জওয়ারিশ নারমুশক
-
মা’জুন ছা’লাব
-
মা’জুন মুমসিক
-
মা’জুন লানা
-
আরক মাউল-লাহম
-
শরবত জিনসিন
-
কুরছ এসপন্দ
-
হাব্বে কুঁচিলা
রোগ প্রতিকারে যত্রিকের ব্যবহারঃ
১/ বদহজম ও কোষ্ঠবদ্ধতা নিরসনে
১০০ গ্রাম ডালিম বীজ, ২০ গ্রাম দারচিনি, ১০ গ্রাম ছোট এলাচ, ১০ গ্রাম তেজপাতা, ৪০ গ্রাম শুঠ, ২০ গ্রাম যত্রিক, ১০ গ্রাম পিপুল, ২০ গ্রাম বিটলবন একত্রে মিশিয়ে রৌদ্রে শুকিয়ে মিহি চূর্ণ করে চেলে নিয়ে বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করুন। প্রত্যহ ২ বার আহারের পর ১ চা চামচ নিয়মিত সেবন করে গেলে বদহজম, কোষ্ঠবদ্ধতা, বুক ও গলা জ্বালা এবং পেট ফাঁপায় বিশেষ উপকার দর্শে। ১-২ মাস নিয়মিত ব্যবহার করে যেতে হবে।
২/ পাকস্থলী ও অন্ত্রের ব্যথা কমায়
১০০ গ্রাম শাহজিরা, ৫০ গ্রাম তজ, ৫০ গ্রাম যত্রিক, ৩০ গ্রাম শুঠ, ৩০ গ্রাম পুদিনা, ২০ গ্রাম ছোট এলাচ, ২০ গ্রাম বিটলবণ, ২০ গ্রাম পিপুল, ২০ গ্রাম বচ (খুলনজান), ৫০ গ্রাম আরবি গাম নিয়ে শুকিয়ে মিহিচূর্ণ করে চেলে নিয়ে প্রয়োজনমতো আরক আজোয়াইন অথবা আরক বাদিয়ান মিশিয়ে ৫০০ মি:গ্রামের বড়ি তৈরী করে ভালোভাবে রৌদ্রে কিংবা ড্রাই চেম্বারে শুকিয়ে বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করুন। ১-২ বড়ি আহারের পর দিনে ৩ বার সেবন করে গেলে পাকস্থলী অন্ত্রনালীর ব্যথা, বমন, বদহজম, ক্ষুধামান্দ্য, পেট ফাঁপায় অত্যন্ত ফলপ্রদ।
অন্যান্য প্রাপ্ত তথ্যঃ
জানা যায় যত্রিক দেহ মনে প্রফূল্লতা আনে। রতিশক্তি বর্ধক, প্রধান অঙ্গসমূহের শক্তিদায়ক, পাচক, মুখের দুর্গন্ধ অপসারক এবং বায়ুনিঃসারক। পাকস্থলী ও জরায়ুর দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা করে। ইউনানী চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে জাফরানের (উন্নত মানের) সাথে যত্রিক ব্যবহার করলে জরায়ু শোধিত ও সবল হয় এবং মূত্রাশয়ের পাথর নষ্ট হয়। মুখ দিয়ে রক্ত আসা, অন্ত্রনালীর ক্ষত, পুরাতন গ্রহণী প্রভৃতি রোগ নিরসনে যত্রিক ব্যবহারে বিশেষ সুফল দর্শায়।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে যত্রিক কটু, তিক্ত ও মধুর রস, রুচিকারক, দেহের বর্ণ প্রসাদক, মুখের দুর্গন্ধ নাশক। ইউরোপীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে যত্রিক উত্তেজক, স্নায়ু উদ্দীপক, পাচক এবং অধিক মাত্রায় সেবনে মাদকতা আসে। পাকস্থলীর ব্যথা, বদহজম এবং ডায়রিয়া ও কলেরা আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে পিপাসা নিবারণের জন্য যত্রিক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
পুষ্টিমান ও রাসায়নিক উপাদান (প্রতি ১০০ গ্রামে)ঃ
-
জলীয় অংশ: ১৫.৯ গ্রাম
-
খনিজ পদার্থ: ১.৬ গ্রাম
-
আঁশ জাতীয় পদার্থ: ৩.৮ গ্রাম
-
খাদ্য শক্তি: ৪৩৭ কিঃ ক্যালোরি
-
চর্বি: ০.৫ গ্রাম
-
শর্করা: ২৯.৪ গ্রাম
-
ক্যালসিয়াম: ৭১০ মিঃগ্রাম
-
লৌহ: ২.৭ গ্রাম
0 Comments