গাজর এর গুণাগুণ / Benefits of Carrots

গাজর (ইংরেজি: Carrot), (বৈজ্ঞানিক নাম:Daucus Carota) একপ্রকার মূল জাতীয় সবজি। নানা প্রকার খাদ্য তৈরিতে গাজর ব্যবহৃত হয়। গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং খাদ্য আঁশসমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি, যা প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। কাচাঁ ও রান্না দু’ভাবেই খাওয়া যায় গাজর। তরকারি ও সালাদ হিসেবেও গাজর অত্যন্ত জনপ্রিয়। গাজর অতি পুষ্টিমান সমৃদ্ধ সবজি। এতে উচ্চমানের বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, মিনারেলস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে।
উপকারীতা:-
১) স্বাস্থ্য সুরক্ষায়:-
• চোখের জ্যোতি বৃদ্ধিঃ গাজর চোখের জ্যোতি বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। গাজরে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন পরবর্তিতে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, চোখের কোষকলা তৈরীতে সাহায্য করে। রাতকানা, গ্লুকোমা ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ করে।
• ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ গাজর ক্যান্সার প্রতিরোধক। গবেষণায় দেখা গেছে, গাজর ফুসফুস ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্রের (কোলন) ক্যান্সার রোধ করে। কারণ, গাজরে আছে পলি-এসিটিলিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সারের কোষ তৈরীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
• হৃদরোগ প্রতিরোধ করেঃ গাজর হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। বিটা ক্যারোটিন, আলফা ক্যারোটিন ও লিউটিন দেহের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এতে সলিউবল ফাইবার থাকে। দুটি একসঙ্গে মিলে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
• বয়স ধরে রাখেঃ নিয়মিত খাবার তালিকায় গাজর রাখলে শরীরের বয়সজনিত ক্ষতিগুলো কম হয়। বয়সের কারণে কোষের ক্ষতি রোধ করতে গাজরের ভূমিকা অনেক। মাতৃকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গাজরে উপস্থিত পলিএষ্টেরন গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে।
• ইনফেকশন কমায়ঃ কোথাও কেটে ছিঁড়ে গেলে অনেক সময় ইনফেকশন হয়ে যায়। কাটা ছেঁড়া জনিত ইনফেকশন এড়াতে গাজর খুবই কার্যকরী। তাই ইনফেকশন এড়াতে কাঁটা ছেঁড়া জায়গায় গাজর ব্লেন্ড করে লাগিয়ে নিন।
• ওজন কমায়ঃ গাজরের যেহেতু প্রচুর পুষ্টি গুণ আছে এবং খেতেও মজা তাই ওজন কমাতে গাজরের জুড়ি নেই। সপ্তাহে কমপক্ষে ছয়টি গাজর খেলে তা স্ট্রোকের ঝুকিঁ কমায়। তাই ওজন কমাতে বেশি বেশি গাজর খান। দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষায় গাজরের ভূমিকা আছে।
২) সৌন্দর্য চর্চায়:- ত্বক ও চুলের যত্নে গাজরের অনেক উপযোগিতা রয়েছে।
• ত্বকের যত্নঃ ত্বকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং পটাশিয়াম না থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। প্রতিদিন গাজরের জুস খেলে ত্বকে পটাশিয়ামের অভাব দূর হবে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। তাই ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে নিয়মিত গাজরের জুস খান।
• ত্বক কে বলিরেখা থেকে রক্ষা করেঃ একটু বয়স হলেই ত্বকে বলিরেখা দেখা দেয়। এছাড়াও ত্বক অনুজ্জ্বল ও দাগ হয়ে যায়। তাছাড়া সূর্যের আলোতেও ত্বক অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। নিয়মিত গাজর খেলে বাহ্যিক ক্ষতি থেকে ত্বক রক্ষা পায় এবং ত্বকে সহজে বয়সের ছাপ পড়ে না। গাজর মুখের বলিরেখা, দাগ ছোপ ও পিগমেন্টেশন প্রতিরোধ করে।
• ত্বক ব্রণ মুক্ত রাখেঃ গাজর খেলে ত্বকের স্বাস্থ্য ভেতর থেকে ভালো থাকে। এছাড়াও গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে যেগুলো ত্বককে ব্রণ থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও ব্রণ উঠলে সে জায়গাটায় নিয়মিত গাজরের রস লাগালে দাগ দূর হয়ে যায় বেশ তাড়াতাড়ি।
• ত্বক উজ্জ্বল করেঃ গাজরের ত্বক উজ্জ্বল করার ক্ষমতা আছে। গাজরের ভিটামিন এ ও বিটা ক্যারোটিন ত্বককে উজ্জ্বল করে। গাজর বেটে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিয়মিত লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
>> চুলের যত্ন:-
• চুল পড়া রোধঃ চুল পড়া রোধে গাজরে উপস্থিত ভিটামিন ও মিনারেল অতি কার্যকর। গাজর চুল পড়া কমায়, চুলকে শক্ত, মজবুত ও ঝলমলে করে। নিয়মিত গাজরের জুস খেলে চুলের গোড়া মজবুত হয়।
• নতুন চুল গজায়ঃ গাজরের ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও ভিটামিন ই মাথার ত্বক ও চুলের গোড়ায় পুষ্টি প্রদান করে। রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
>> গাজরের ময়েশ্চারাইজিং ফেসপ্যাকঃ
উপকরণঃ
১। ২ টেবিল চামচ কুচি করা গাজর,
২। ১ টেবিল চামচ মধু,
৩। ১ টেবিল চামচ দুধের ক্রিম,
৪। কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল।
ব্যবহারঃ কুচি করা গাজরের পেষ্ট তৈরী করুন। একটি বাটিতে গাজর পেষ্ট ও বাকি সবগুলো উপাদান নিয়ে একটি ঘন মসৃণ মিশ্রণ তৈরী করুন। এবার পুরো মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। লক্ষ্য করুন আপনার উজ্জ্বল, দীপ্তিময় ও ময়েশ্চারাইজড ত্বক।
>>গাজরের তৈরী চুলের প্যাকঃ
উপকরণঃ
১। ৩ টেবিল চামচ সেদ্ধ করা গাজর বাটা
২। একটি পাকা কলা
৩। ১ টেবিল চামচ মধু
৪। ১ টেবিল চামচ টক দই
৫। সামান্য অলিভ অয়েল
ব্যবহারবিধিঃ
একটি পাত্রে সেদ্ধ করা গাজর বাটা নিন। একটি পাকা কলা টুকরো করে নিন। তাতে দই, অলিভ অয়েল ও মধু নিয়ে ব্লেন্ডার দিয়ে পেষ্ট তৈরী করে নিন। পুরো চুল প্রথমে ভালো ভাবে আচঁড়ে নিন। মাথার চুল দু ভাগে ভাগ করে ধীরে ধীরে পুরো চুলে মিশ্রণটি লাগিয়ে নিন। সম্ভব হলে একটি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে পুরো মাথা ঢেকে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা আপেক্ষা করুন, যেন মিশ্রণটি মাথার ত্বক ও চুলে সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে। এবার ঠান্ডা পানি দিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। একটি হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল সম্পূর্নভাবে পরিষ্কার করুন। নিষ্প্রাণ, মলিন ও দূর্বল চুলের জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকরী একটি হেয়ার ট্রিটমেন্ট।
সাথে থাকুন, শেয়ার করুন!
ধন্যবাদ!!